আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয় কানকে বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ এই তিন অংশে ভাগ করা হয়েছে। বহিঃকর্ণের এক তৃতীয়াংশের দেয়ালের মধ্যকার পরিবর্তিত এপোক্রিন ঘর্মগ্রন্থি ও সেবাম গ্রন্থির মিশ্রিত ক্ষরণই সেরুমেন বা ওয়াক্স। একে সাধারণত ‘কানের ময়লা’ বলা হয়ে থাকে। আমাদের শরীরে কানের ওয়াক্সের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে।
এ খৈলের বিশেষ গুণ হচ্ছে, এটি পানি প্রতিরোধী, যা কানের পর্দাকে রক্ষার কাজ করে। এতে এনজাইম থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া/ভাইরাসকে ধ্বংস করে থাকে। সর্বোপরি কানের পর্দাকে সুরক্ষার কাজ করে। এ ছাড়াও এটি কর্ণকুহরের ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।
তবে গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে সেরুমেন তৈরি হলে শক্ত হয়ে বহিঃকর্ণে পুরোটা আটকে গিয়ে কানের পর্দার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং শ্রবণশক্তির হানি ঘটাতে পারে। ওয়াক্স অর্থাৎ কানের খৈলের রং সাধারণত খয়েরি। কিন্তু বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে কখনো কখনো কালো রং ধারণ করে।
* উপসর্গ
অনেক সময় কানের ময়লা বেশি শক্ত হয়ে যায়। তখন সহজেই কান থেকে বের হয় না। কানে অতিরিক্ত ময়লা জমে ওয়াক্সের বলা জমাটবদ্ধ ময়লার সৃষ্টি হলে যেসব সমস্যা দেখা দেয়-
* কারা আক্রান্ত হন
যে কোনো বয়সের যে কেউ এ ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারেন। তবে বাচ্চাদের, বয়স্কদের এবং যাদের জন্মগতভাবে কানের ছিদ্র ছোট তারাই অধিকহারে এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
* করণীয়
কানের ময়লা স্বয়ংক্রিয় তথা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চিবানোর সময় এবং হাই তোলার সময় স্বাভাবিকভাবে ময়লা বেরিয়ে যাওয়ার পথে তৈরি করে রাখে। এটি সাধারণত খুব হালকা ধরনের হয়ে থাকে এবং তা অনুভব করা যায় না।
কিন্তু কেউ যদি তা অনুভব করতে পারেন, যেমন- কারো মনে হয় যে, কানভর্তি ময়লা এবং তা আঙুলের সাহায্যে বেরিয়ে আসছে না, তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এরকম হলে কান কখনো খোঁচাখুঁচি করবেন না।
খৈল থাকা অবস্থায় কান খোঁচাখুচি করলে কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে, এমন কি শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা খুব সহজেই কান দেখে বুঝে নিতে পারেন কানের ভিতরকার অবস্থা। কানের ভিতরে ময়লা থাকলে তা বের করে দেয়ারও ব্যবস্থা করবেন চিকিৎসক।
কানে যদি ময়লা খুব শক্ত হয়ে থাকে তাহলে সেটা বের করে আনা একটু কঠিন। সেক্ষেত্রে ময়লা নরম করার জন্য কানে অলিভ অয়েল ৫ ফোঁটা ৫ বার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে ফলোআপে ময়লা বিভিন্ন পদ্ধতিতে বের করে আনা হয়। তবে কানের পর্দা ছিদ্র থাকলে অলিভ অয়েল তেল দেওয়া যাবে না।
অনেক সময় দেখা যায়, শিশু বাচ্চা কোনোভাবেই স্থির হয় না বা খুব নড়াচড়া এবং অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে। তখন গভীর ঘুমের ব্যবস্থা করে বা অল্প সময়ের জন্য ঘুম পাড়িয়ে ওয়াক্স বের করে আনা হয়। এতে অভিভাবকদের ঘাবড়ানোর কিছু নেই, এটা চিকিৎসারই একটা পদ্ধতি।
লেখক : এফসিপিএস (ইএনটি), রেজিস্ট্রার, নাক-কান-গলা বিভাগ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
© Rajbari News Portal | Website Design & Developed by Glossy IT