ব্যাপক শক্তিশালী ভূমিকম্প জাপানে

জাপানে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের শক্তি বোঝা যাবে ভূপৃষ্ঠের উপরিতল কতটা সরেছে তা দেখলে। কোনো কোনো জায়গায় ভূপৃষ্ঠ চার মিটারের (১৩ ফুট) বেশি ওপরে উঠে গেছে এবং এক মিটারের বেশি পাশে সরে গেছে।

ভূমিকম্পের সময় কী ঘটছে, তাতে নজর রাখার ক্ষেত্রে এই দুর্যোগপ্রবণ জাপান অনেক এগিয়ে। সে কারণে দেশটি এসব সূক্ষ্ম বিষয় পরিমাপ করতে পারে।

দেশজুড়ে জায়গায় জায়গায় জিপিএস স্টেশন ডটের নেটওয়ার্ক রয়েছে জাপানে। সে কারণে ভূমিকম্প আঘাত হানলে বিজ্ঞানীরা বলতে পারেন, কোন ডট কতটা সরেছে। তাতে বোঝা যায় ভূপৃষ্ঠ কতটা সরেছে।

এই ব্যবস্থায় দেখা গেছে, জাপানে সোমবারের ভূমিকম্পের পর মাটি পশ্চিম দিকে ১৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত সরে গেছে।

এদিকে বিজ্ঞানীরা মহাকাশ থেকেও জাপানের ওপর চোখ রেখেছেন। ভূমিকম্পের আগে ও পরে নেওয়া স্যাটেলাইটের চিত্রগুলো তুলনা করে দেখেছেন তাঁরা।

ভূমিকম্পের পর জাপানের এএলওএস–২ মহাকাশযান (ভূপৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইট) থেকে ভূপৃষ্ঠের দূরত্বও কমার তথ্য পাওয়া গেছে। সেটা হয়েছে ভূমিকম্পের শক্তির ধাক্কায় ভূপৃষ্ঠ ওপরের দিকে ওঠার কারণে।

মাটি সবচেয়ে বেশি সরেছে জাপানের প্রধান দ্বীপ নোটো উপদ্বীপের পশ্চিমাংশে। সেখানে উপকূল থেকে সমুদ্রের তলদেশ সরে গেছে, তার থেকে প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার উচ্চতার সুনামির ঢেউ তৈরি হয়েছে। ভূমিকম্পের কারণে উপকূলের মাটি ওপরে ওঠায় সুনামির ঢেউ যখন উপকূলরেখায় পৌঁছেছে, তখন তার প্রভাব কমেছে।

গত বছর তুরস্কে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে যে শক্তি নির্গত হয়েছিল, তার মতোই শক্তি নির্গত হয়েছে জাপানের এই ভূমিকম্পে। তবে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ওই ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছিল। এর আগে ২০১০ সালে হাইতিতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে এক লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। জাপানে এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

জাপানের অবস্থান চারটি প্রধান টেকটোনিক প্লেটের সঙ্গমস্থলে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি এটি। সারা বিশ্বে ৬ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার যেসব ভূমিকম্প হয়, তার প্রায় ২০ শতাংশ জাপানে হয়ে থাকে। সে কারণে ভূমিকম্প–সহিষ্ণু অবকাঠামো তৈরির ওপর ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করেছে জাপান। দেশটির জনসাধারণকেও সেভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।

জাপানে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারতবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়। কীভাবে ভূমিকম্প মোকাবিলা করতে হয়, সে বিষয়ে নাগরিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিশ্বে যেসব দেশে ভূমিকম্পের ঘটনায় দ্রুত সতর্কবার্তা পাঠানোর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে, তার একটি জাপান।

কখন কোন মাত্রায় ভূমিকম্প হবে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী দিতে পারেন না। তবে ভূমিকম্পের প্রক্রিয়া শুরু হলে টেলিভিশন, রেডিও ও সেলফোনের নেটওয়ার্কে সঙ্গে সঙ্গে বার্তা চলে যায়। এই সতর্কবার্তার ব্যবস্থার কারণে ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে দূরে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা সম্ভবত কম্পন টের পাওয়ার ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড আগে বার্তা পেয়ে যান।

এটা খুব বেশি সময় নয়। তবে তা স্থানীয় ফায়ার স্টেশনের দরজা খোলা, অতি দ্রুতগতিতে থাকা ট্রেনে ব্রেক চাপা এবং সবার জন্য সতর্ক অবস্থান নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

Follow Us
ফ্লিকার ফটো

© Rajbari News Portal | Website Design & Developed by Glossy IT