ঝিরিঝিরি বাতাস। শেষ বিকেলের এই স্নিগ্ধ হাওয়ার শীতলতা মুহূর্তেই পৌঁছে যায় হৃদয়ের গহীনে। বড় রাস্তা হতে নেমে একটু দূরেই যেন সবুজের সমুদ্র, বিশাল ধানক্ষেত। মৃদু বাতাসের সাথে কচি ধান গাছগুলো মনের আনন্দে খেলছে। তরতাজা ধানগাছগুলোর সাথে ক্ষেতের আলোর কচি ঘাসগুলোর যেন রয়েছে গভীর মিতালী। কী অপরূপ সৌন্দর্য! যেন পরম আদরে কাছে টেনে নেয় সবাইকে।
বাতাসে দোল খেয়ে চারাগুলো একে অপরের গায়ে লুটিয়ে পড়ে। বাতাসের প্রকোপ কমলে আবার চলে আসে স্বস্থানে। বাতাসের তালে ধানগাছের এমন ছন্দময় দোলাচল মনকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করে। ক্ষেতের সীমানা দিয়ে দু'হাতে ধানগাছগুলো ছুঁয়ে বিলের মাঝখানে হেঁটে গেলে, অদ্ভুত শিহরণ জাগে মনে।
ঘন সবুজ গালিচার মতো এই মনোমুগ্ধকর ধান ক্ষেতের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে একটি কাকতাড়ুয়া। ধানবীজ ক্ষেতে বুননের সময় তাকে দাঁড় করানো হয়েছিল। সে সঙ্গীহীন। সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। কারো সাথেই তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই। তবে বাতাসের সাথে তার গভীর ভাব। শুধু তার সাথেই সে মনের আনন্দে এদিক ওদিক দুলতে থাকে। যেন কথা কয়!
কালো হাঁড়িতে সাদা চুন দিয়ে আঁকা কাকতাড়ুয়ার ভয়ঙ্কর মুখাবয়ব। বার বার যেন বুঝিয়ে দেয়, যেমনই হও ভেঙে পড়ো না। নিজের কাজটি যথাযথভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। নিঃসঙ্গতা আহামরি কিছু নয়। এই নিঃসঙ্গতা নিয়েই পাখি তাড়িয়ে যাচ্ছে জোসনাহীন অন্ধকার রাতেও।
এভাবেই সবুজের সমারোহের মাঝে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন পাহারা দিয়ে যাচ্ছে কাকতাড়ুয়া। সেই সোনালী স্বপ্ন পরিপক্ক হয়ে এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে আপনগৃহে প্রত্যাবর্তনের।
© Rajbari News Portal. All Rights Reserved. Design by Glossy IT