স্থায়ুযুদ্ধের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অস্ত্রভা-ারে যে সব দূরপাল্লার পারমাণবিক সমরাস্ত্র মজুদ ছিল সেগুলো সর্বনিম্ন পর্যায়ে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশ দু’টি আট বছর আগে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল সোমবারে তা পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরকালে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা এই মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এটি ভবিষ্যতে আরও বেশি অস্ত্র হ্রাসের প্রাথমিক ছোট্ট পদক্ষেপ- যা শেষ পর্যন্ত একটি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। কিন্তু বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ওবামার সেই আশাবাদের কোন প্রতিফলন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না- বরং তার উল্টোটাই ঘটতে দেখা যাচ্ছে। কারণ গত শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি নতুন পারমাণবিক নীতি গ্রহণ করেছে যা ভদিমির পুতিনের আধুনিকায়িত রুশবাহিনীকে রুখে দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে। এতে ওবামা স্বাক্ষরিত চুক্তির কোন বরখেলাপ হবে না বরং নতুন মাত্রায় পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা হবে। নতুন এই মার্কিন কৌশল অনুযায়ী পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটবে না অথচ অস্ত্র প্রযুক্তির উন্নত ও সূক্ষ্ম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। যাতে প্রতিপক্ষের রণকৌশল মার খেয়ে যায় এবং রণাঙ্গনে হতবুদ্ধিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পেন্টাগনের দৃষ্টিতে এই নতুন পারমাণবিক নীতি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে এবং পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার আরও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। এই কৌশলের অংশ হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্রগুলো সীমিত পরিধিতে ব্যবহার্য এবং অপেক্ষাকৃত কম বিধ্বংসী কার্যকরী সক্ষমতায় তৈরি করা হবে। নতুন পরমাণু অস্ত্র নীতির সমর্থকদের বক্তব্য হচ্ছে যে, এটি রুশদের অগ্রাভিযান ঠেকাতে বেশ কার্যকরী হবে। পক্ষান্তরে এই নীতির সমালোচকদের বক্তব্য হচ্ছে, দ্রুত পরিবহন ও মোতায়েন করতে সক্ষম এসব পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে যে কোন প্রেসিডেন্ট প্রলুব্ধ হতে পারেন। এক্ষেত্রে ট্রাম্পের মতো অস্থিরচিত্ত প্রেসিডেন্টকে ইঙ্গিত করেই বিশ্লেষকরা এ ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যেই ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য ‘ফায়ার এ্যান্ড ফিউরি’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু গত সপ্তাহে স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের ভাষণে ট্রাম্প একবারের জন্যও রাশিয়াকে মোকাবেলার জন্য পারমাণবিক অস্ত্রের আধুনিকায়নের কথা বলেন নি। তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের আধুনিকায়নে এক দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি হলেও তা অনুমোদনের পক্ষে তার অভিমত প্রকাশ করেছেন। স্টেট অব দ্য ইউনিয়নে ট্রাম্প তার বক্তৃতায় প্রধানত উত্তর কোরিয়া ও সন্ত্রাসী কর্মকা- দমনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়া যে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবেলা করার মতো কোন প্রতিপক্ষ নয় বরং আরও বড় কোন শক্তি দেশটির প্রতিপক্ষ এটি কয়েকদিন আগেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ নয়, বরং পরাশক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হচ্ছে বর্তমান মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার মূল লক্ষ্য। প্রেসিডেন্ট তার স্টেট ইউনিয়ন ভাষণে যে কথা উল্লেখ করেননি তা শুক্রবারে প্রকাশিতÑ পারমাণবিক অবস্থা পর্যালোচনা শীর্ষক এক প্রতিবেদনে রাশিয়াকে ইঙ্গিত করে মার্কিন সমরসজ্জার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এতে বলা হয়, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সামরিক কর্মকা- যুক্তরাষ্ট্রকে তার পারমাণবিক যুদ্ধ সরঞ্জাম পুনর্গঠনে বাধ্য করছে। এই প্রতিবেদনে পেন্টাগন ও প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তুতকৃত বেশ কিছু দলিল সংযুক্ত করা হয়। এসব প্রতিবেদনে রাশিয়ার আগ্রাসী সামরিক তৎপরতার বেশ কিছু তথ্য সন্নিবেশিত হয়। এরমধ্যে রুশ নির্মিত স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক টর্পেডোর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। এই পরমাণু প্রযুক্তিসম্পন্ন টর্পেডো প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় মোতায়েনের লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। এটির চলাচল ও গতিবিধি শনাক্ত করা যায় না- এবং এই টর্পোডো আঘাত হানলে মারাত্মক তেজষ্ক্রিয় ধুম্রকু-লির সৃষ্টি হবে। যাতে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলবর্তী বিশাল অঞ্চল জনমানব শূন্য হয়ে পড়বে। রাশিয়ার সঙ্গে ওবামা স্বাক্ষরিত চুক্তি যা নিউ স্টার্ট (নব যাত্রা) নামে তখন প্রকাশিত হয়েছিল তাতে কিন্তু এই রুশ নির্মিত পারমাণবিক টর্পেডোর কোন উল্লেখ নেই। চুক্তির ফাঁক ফোকর দিয়ে রাশিয়া তার সমরসজ্জা অব্যাহত রেখেছে তাই যুক্তরাষ্ট্রকে তার নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রতিরক্ষা কার্যক্রম আরও সুসংহত করতে হবে বলে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নতুন পারমাণবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রেসিডেন্টকে অবহিত করা হলে তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য জেনারেল ম্যাটিস ও লেঃ জেনারেল ম্যাক মাস্টারকে মতামত প্রদানের জন্য দায়িত্ব দেন। পরে বিস্তারিতভাবে অবগত হয়ে সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তিনি রাশিয়াকে প্রথম এবং চীনকে দ্বিতীয় স্থানে রাখার পরামর্শ দেন। এ সময় ট্রাম্পকে রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতার বেশ কিছু দিক তুলে ধরা হয়। রাশিয়ার বোমারু বিমানগুলোর সুনিপুণ লক্ষ্যভেদ প্রক্রিয়া, জলে স্থলে দূরপাল্লার নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ছাড়াও নতুন দুটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির কথা ট্রাম্পকে জানানো হয় এবং এসবই ওবামা স্বাক্ষরিত ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির লঙ্ঘন। সবকিছু অবহিত হওয়ার পর ট্রাম্প প্রকাশ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিছু না বললেও এক দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র প্রযুক্তি উন্নয়নে অনুমোদনের কথা বলেন।
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Tuesday, February 6, 2018
যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্রসজ্জা
Tags
# আন্তর্জাতিক

About News Desk
আন্তর্জাতিক
Labels:
আন্তর্জাতিক
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.