জবাবটা দেয়ার জন্য মুখিয়েই ছিলেন তারা দু’জন। রূঢ় আচরণ, বিরূপ মন্তব্য আর অবহেলার এমন তীব্র জবাব এত দ্রুতই পেয়ে যাবেন চান্দিকা হাতুরাসিংহে তা হয়তো কেউ ভাবেওনি। বাংলাদেশের কোচ থাকার সময় মুমিনুল হককে তার পছন্দ হয়নি। একবার বলেছিলেন বাউন্সার কিংবা শর্ট অব লেন্থের বলে দুর্বলতা এবং আরেকবার অফস্পিন খেলতে পারেন নাÑ এসব বলে মুমিনুলকে বসিয়ে রেখেছিলেন। অথচ তার টেস্ট গড় বাংলাদেশের মধ্যে সর্বাধিক। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ‘টেস্ট খেলার অযোগ্য’ তকমা দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। অথচ মিডলঅর্ডারের অন্যতম নির্ভরতা তিনি। বিধাতার কি লীলাখেলা, চান্দিকা শ্রীলঙ্কার কোচ হয়ে প্রথম মিশনে এসেছেন বাংলাদেশে আর প্রথম টেস্টের একেবারে প্রথমদিনেই চান্দিকার সেই রূঢ় বঞ্চনাকে চপেটাঘাত করেছেন মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ। বাংলাদেশের ইনিংসে মুমিনুল সর্বোচ্চ ১৭৬ এবং মাহমুদুল্লাহ অধিনায়ক হিসেবে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংস খেলেন। এর মাধ্যমে দেশের সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ২ হাজার রান পূর্ণ করেছেন অধিনায়ক। চান্দিকা হাতুরাসিংহের সঙ্গে এক অদৃশ্য লড়াইয়ের শুরুতেই তার মুখ কালো করে দেন মাহমুদুল্লাহ। চান্দিকার দৃষ্টিতে টেস্টে অনুপযুক্ত মাহমুদুল্লাহ মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানেই অধিনায়ক হয়ে বুধবার শুরু হওয়া প্রথম টেস্টে টস করেন। তাকেই দেশের শততম টেস্টে বসিয়ে রেখেছিলেন তখন বাংলাদেশের কোচ হিসেবে থাকা চান্দিকা। পরে ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে দলেই ডাক পাননি। দেশের অন্যতম অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যানের প্রতি এমন বঞ্চনা ও অবিচার হয়তো সহ্য করেননি স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও। এবার সাকিব আল হাসানের ইনজুরিটাও যেন তারই ইশারায় হয়েছে। সেই সুযোগে মাহমুদুল্লাহ দেশের দশম টেস্ট অধিনায়ক হয়ে গেছেন। চান্দিকাকে প্রথম জবাবটা দেন মুমিনুলইÑ প্রথমদিনে ১৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন। একদিনে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ব্যক্তিগত রান। ২ হাজার রান পূর্ণ করেন ষষ্ঠ বাংলাদেশী হিসেবে। আর মাহমুদুল্লাহর প্রয়োজন ছিল ৬৯ রান। এই টেস্টে নামার আগে ৩৫ টেস্টে ৩০.১৭ গড়ে ১৯৩১ রান করেছিলেন তিনি ১ সেঞ্চুরি ও ১৪ হাফ সেঞ্চুরিসহ। বাংলাদেশের দশম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন মাহমুদুল্লাহ। তার ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত লঙ্কান শিবির ও কোচ চান্দিকাকে মোক্ষম জবাব প্রথমদিনেই দিয়েছিল। দিনের শেষভাগে তিনি ব্যাট হাতে নামেন। ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। তারজন্য ভাল ইনিংস খেলাটা বেশ কঠিন ছিল ৬ নম্বরে নেমে। ততোক্ষণে ৪ টপঅর্ডার বিদায় নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতেই বড় ইনিংস খেলা মুমিনুলকেও হারান তিনি। মোসাদ্দেকও ফিরে যান দ্রুত। কিন্তু ধৈর্যহারা হননি মাহমুদুল্লাহ। সপ্তম উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ২৭, অষ্টম উইকেটে সানজামুল ইসলামের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটি গড়ে তোলেন। ক্যারিয়ারের ১৫তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে আবার সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২ হাজার টেস্ট রানও পূর্ণ করেন। নিশ্চিত সেঞ্চুরির পথে এগোতে থাকা মাহমুদুল্লাহকে অবশ্য ৮৩ রান করে থেমে যেতে হয়েছে দলের ইনিংস গুটিয়ে যাওয়াতে। কিন্তু তাকে হাতুরাসিংহের কৌশল কাজে লাগিয়ে থামাতে পারেননি কোন লঙ্কান বোলার। ১৩৪ বলে ৭ চার, ২ ছক্কায় ৮৩ রানে অপরাজিত থাকেন। এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেরা টেস্ট ইনিংস। ১১৫ রান করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হ্যামিল্টনে, সে বছরই জানুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন ঢাকা টেস্টে। হাতুরাসিংহের বঞ্চনার কি জবাবটাই না দিলেন মাহমুদুল্লাহ- কথায় নয়, ব্যাট হাতে!
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Friday, February 2, 2018
হাতুরাকে বুঝিয়ে দিলেন মাহমুদুল্লাহ
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.