এক এক করে চারটি ফাইনাল খেলল বাংলাদেশ। চারটিতেই হারল। সেই চারটি ফাইনাল আবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই খেলল। কিন্তু একটিতেও জিততে পারল না। সর্বশেষ শনিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও হারল বাংলাদেশ। শিরোপা জেতার স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। তা অধরাই রয়ে গেল। শিরোপা জিততে না পারার কষ্টে এখন পুড়ছে বাংলাদেশ। আর তাতে করে একটি প্রশ্নও উঠে গেল। ‘চোকার্স’ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ? ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, ২০১২ সালে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে, ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ টি২০তে ভারতের বিপক্ষে এবং রবিবার ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে হেরে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। শুধু কি ফাইনালেই হারছে বাংলাদেশ, সেমিফাইনাল, কোয়ার্টার ফাইনালেও তো হারছে। গত বছর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালেই যেমন ভারতের কাছে হেরেছে। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছে। এরও আগে ২০০০ সালে আইসিসি নকআউট (এখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) টুর্নামেন্টের প্রিলিমিনারি কোয়ার্টার ফাইনালেও ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলটাকে ‘চোকার্স’ বলা হয়। কারণ প্রোটিয়ারা আসল সময়ে গিয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারে না। বাংলাদেশের কপালেও যেন সেই ‘চোকার্স’ পদবী লেগে যাচ্ছে। নকআউট পর্বে কিংবা ফাইনালে গিয়ে যে আর পারে না বাংলাদেশ। শনিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৯ রানে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার পর যেমন এই প্রশ্ন উঠেও গেল। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সামনে প্রশ্নও ছোড়া হলো, ‘চোকার্স’ কিনা? মাশরাফি জানালেন তিনি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন, ‘আমি ভাগ্যে কিছুটা বিশ্বাস করি। আমি ওটা বলব না। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দল হওয়ার পর হয়তো বলা যাবে আমরা চোক করছি কিনা। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের মেলানো যুক্তিসঙ্গত না। আমাদের ওই লেভেলে আগে যেতে হবে। ওরা সবসময় র্যাঙ্কিংয়ে ১-২-৩এ থাকে। তাদের লেভেলে গিয়ে এটা বলা ঠিক হবে।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের জ্বালা এমনিতেই আছে। শিরোপা জেতার আশা ভঙ্গ হওয়ার জ্বালা আছে। এর সঙ্গে আবার বারবার এমন ম্যাচে হার হওয়ার কষ্ট আছে। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমন ম্যাচে এবার হারের দুঃখ বোধটা অনেক বেশি। কারণ বাংলাদেশ যেভাবে সিরিজে খেলা শুরু করেছিল, দাপট দেখাচ্ছিল তাতে বাংলাদেশই শিরোপা জিতবে তা ধরেই নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা বাজিমাত করল। চন্দিকা হাতুরাসিংহে যে পরিকল্পনা করে ক্রিকেটারদের খেলিয়েছেন তা কাজে লেগে গেছে। তাতে করে বাংলাদেশের কষ্টটা আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ছিলেন চন্দিকা হাতুরাসিংহে। তিনি থাকতে বাংলাদেশ দল অনেক সাফল্য পেয়েছে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছে। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে সিরিজে হারিয়েছে। এই সিরিজের আগেই বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেন হাতুরাসিংহে। শ্রীলঙ্কা দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন। প্রথম এ্যাসাইনমেন্টেই সাফল্য তুলে নিয়েছেন হাতুরাসিংহে। বিধ্বস্ত দলটির দায়িত্ব নিয়ে বদলে ফেলেন। বাংলাদেশের মাটিতেই তার প্রথম এ্যাসাইনমেন্ট থাকে। তাতে শতভাগ সাফল্য পান। এই হাতুরাসিংহের জন্যই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতা জরুরী ছিল। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সিরিজ শুরুর আগেই বলেছিলেন, কোচ খেলেন না। খেলেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটাররাই দলকে জেতান। ক্রিকেটাররাই নিজেদের নৈপুণ্য দিয়ে দলকে সাফল্য এনে দেন। কিন্তু হাতুরাসিংহে দেখিয়ে দিলেন তিনি মাঠে না খেললেও বাইরে থেকে অনেক কিছুই করার ক্ষমতা রাখেন। বাইরে থেকে সিদ্ধান্ত দেন। সেই সিদ্ধান্তগুলো ক্রিকেটাররা কাজে লাগাতে পারলে চ্যাম্পিয়নও হওয়া যায়। শ্রীলঙ্কা যেমন চ্যাম্পিয়ন হলো। হাতুরাসিংহেকে বুঝিয়ে দিতেই বাংলাদেশের শিরোপা জেতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাতে করে এর আগে তিনবার শিরোপা না পাওয়ার জ্বালাও মিটতো। কিন্তু তা হয়নি। শিরোপা অধরাই থেকে গেল বাংলাদেশের। তাতে হাতুরাসিংহের শ্রীলঙ্কার কাছে ফাইনালে হারার আগুনেও পুড়তে হলো। সিরিজে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়েকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দেয়। এরপর শ্রীলঙ্কাকেও ১৬৩ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুইয়েকে ৯১ রানে হারায়। কি দাপট দেখায়। মনে করা হচ্ছিল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু মুহূর্তেই সব বদলে যেতে থাকল। যে শ্রীলঙ্কা প্রথম দুই ম্যাচে বিধ্বস্ত হয়েছে। জিম্বাবুইয়ের মতো দলের কাছে ১২ রানে হারের পর বাংলাদেশের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে। যে দলটি সিরিজ থেকেই বিদায় নেবে ধরে নেয়া হয়েছে। সেই দলটিই কিনা এমনভাবে ঘুরে দাঁড়াল শিরোপাই ঘরে তুললো। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ৫ উইকেটে জিতেই ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। দলের ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। এমনই আত্মবিশ্বাস যোগ হয় যে বাংলাদেশকেও পাত্তা দেয়নি শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ খেলে। ম্যাচটিতে বড় ব্যবধানে হারলে শ্রীলঙ্কার বিদায় ঘটত। এমন ম্যাচে এসে নির্ভার বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা এমনই খেলা দেখালেন শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে উড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশকে ৮২ রানে অলআউট করে দিয়ে ১০ উইকেটে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে খেলাও নিশ্চিত করে নেয়। এই ম্যাচটির পর বাংলাদেশ শিরোপা জিতবেই এমন বলা লোকের সংখ্যা কমে যায়। কারণ শ্রীলঙ্কা যে খেল দেখিয়ে ফেলে। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দেবে বাংলাদেশ। এমন আর ভাবার উপায় ছিল না। তাই বলে উল্টো উড়ে যাবে বাংলাদেশ। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে এসে এমন দুমড়ে মুছড়ে যাবে মাশরাফিবাহিনী। শ্রীলঙ্কাকে ২২১ রানে বেঁধে রেখেও জয় তুলে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৪২ রানেই গুটিয়ে যায়। হার হয় ৭৯ রানে। সেই হার বাংলাদেশের শিরোপা অধরাও রাখে। গত বছর টানা ওয়ানডে হারতে থাকা শ্রীলঙ্কা এ সিরিজেও প্রথম দুই ম্যাচে হারে। তৃতীয় ম্যাচ থেকে এমনই বদলে যায় চ্যাম্পিয়নই হয়ে যায়। যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতারই জেদ থাকে ক্রিকেটারদের। হাতুরাসিংহে কোচ থাকায় জেদটা আরও বেশি করে থাকে। কিন্তু সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই টানা দুই ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। শিরোপা জেতার স্বপ্নও ভঙ্গ হয়। ফাইনালে ফিল্ডিং করতে গিয়ে সাকিব আল হাসান ইনজুরিতে পড়েন। সেই ইনজুরিতে যে মাঠ ছাড়েন সেখানেই যেন বাংলাদেশের হতাশা যুক্ত হয়ে যায়। ব্যাট হাতে নেমে সাকিব বড় ইনিংস খেলতেন এমন কোন নিশ্চয়তা ছিল না। কিন্তু সাকিব থাকা মানে সাহস থাকা। আত্মবিশ্বাস থাকা। সেটিই তো আর থাকল না। তাতে করে বাংলাদেশও গুঁড়িয়ে গেল। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছাড়া আর কেউই ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারলেন না। গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচে গিয়ে দলের হাল ধরতে পারলেন না। তাতে করে শিরোপা জিততে না পারার কষ্টে পুড়ল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই যেমন ফাইনাল শেষে বলেছেন, ‘স্বাভাবিক সবাই হতাশ। আমরা যেটা প্রত্যাশা করিনি সেটাই হয়েছে। আমরা অবশ্যই চেয়েছিলাম জিততে কিন্তু আমরা তা পারিনি। ফাইনাল ম্যাচ হারলে সবাই ডাউন থাকে ড্রেসিংরুমে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘প্রত্যেক খেলোয়াড়ই জানতো সাকিব খেলতে পারবে না। এটা এক্সকিউজ দেয়া ঠিক হবে না। ২২০ চেজ করার মতো ব্যাটসম্যান আমাদের ছিল। দশ ওভার শেষে রিয়াদ এবং মুশফিক যেভাবে ব্যাটিং করছিল। আমার মনে হয় তাদের জুটিটা আরও একটু এগিয়ে যেতে পারলে পরের দিকে হয়তো একটু সহজ হতো। তখন হয়তো সাকিব একটু এ্যাফোর্ট দিতে পারত। কারণ এটা ছিল ফাইনাল। কিন্তু মুশফিক আউট হওয়ার পর চিত্রটা পাল্টে যায়। আরেক পাশের সাপোর্ট অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। রিয়াদ শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছে। ওই সময় শটস খেলাটা খুব স্বাভাবিক। ৩-৪-৫ থেকে যদি সাপোর্ট পেত তাহলে ওর খেলাটা আরও ডিপে যেত। আমি যখন উইকেট যাই, দেখেছি তখনও ও চেষ্টা করছিল। পার্টনার হেল্প না করতে পারলে আসলেই কঠিন।’ কেউ মাহমুদুল্লাহকে সঙ্গ দিতে না পারায় বাংলাদেশও ফাইনালে হারে। আর তাতে করে ‘চোকার্স’ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও। এই কথাটিও সবার মুখে মুখেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Monday, January 29, 2018
‘চোকার্স’ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও!
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.