প্রায় ১৫ হাজার বছর আগে একপ্রকার নেকড়ে মানুষের শিকারের সঙ্গী হওয়ার মাধ্যমে গৃহপালিত পশুতে পরিণত হয়। তবে কারও কারও মতে কুকুর মানুষের বশে আসে ১০০,০০০ বছর আগে। অবশ্য অনেক তথ্যসূত্র অনুযায়ী কুকুরের গৃহ পালিতকরণের সময় আরও সাম্প্রতিক বলে ধারণা প্রকাশ করে থাকে। নেকড়ে ও শিয়াল কুকুরের খুবই ঘনিষ্ঠ প্রজাতি । তবে গৃহপালিত হওয়ার পরে কুকুরের বহু বৈচিত্র্যময় জাত (breed) তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র কয়েক ইঞ্চি উচ্চতার কুকুর (যেমন চিহুয়াহুয়া) থেকে শুরু করে তিন ফুট উঁচু (যেমন আইরিশ উলফহাউন্ড) রয়েছে। কুকুরের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আদিকালে গুহা মানবরা তাদের নিরাপত্তার জন্য কুকুর পোষা শুরু করে। প্রভূভক্তিতে কুকুরের সমকক্ষ আর কোন প্রাণির নাম পাওয়া যাবে না। মনিবের কবরের পাশে বসে থাকা, মৃত মনিবকে খুঁজে খুঁজে ফেরার মত কুকুরের ইতিহাস আমাদের জানা আছে। তবে এখন কুকুর সম্পর্কে এমনকিছু তথ্য জানাবো যেগুলো হয়তো প্রায় সকলের কাছে নতুন লাগবে। কথা না বাড়িয়ে চলুন জানা যাক।দৃশ্যটা প্রায় সকলেরই চেনা। প্রতিদিনের যাতায়াতে প্রায়শই চোখে পড়ে। কোনও চলন্ত গাড়ির পিছনে ধাওয়া করছে কুকুর। কখনও বা দল বেঁধে তাদের দৌড়তে দেখা যায়। কিন্তু কেন? গাড়ি দেখলেই কেন মেজাজ হারায় কুকুররা? অনেকেই ভাবেন, গাড়ির গতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে কুকুররা। এটা তাদের স্বাভাবিক একটা অভ্যাস। ছোটবেলা থেকেই কুকুররা এরকম দৌড়ের খেলায় মেতে থাকে। সেটা একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু শুধু এরকমটা ভাবলে ভুল হয়ে যাবে। কেননা অপর ব্যাখ্যাটিও বেশ মজার। আসলে কুকুররাও নিজেদের এলাকা ভাগ করে রাখে। আস্তানায় ফেরার জন্য চিনে রাখে তার বাসস্থান ও আশেপাশের এলাকা। এবং এই চিনে রাখার উপায়টিও বেশ অভিনব। আসলে প্রস্রাবের গন্ধেই এলাকা চিনে রাখে কুকুররা। এ কারণে যে এলাকায় তাদের বাস সে এলাকার আশেপাশের গাড়ির চাকায় প্রস্রাব করে রাখে তারা। অন্য এলাকা থেকে গাড়ি ঢুকলে অচেনা গন্ধ টের পায় কুকুররা। তাতেই বুঝতে পারে অচেনা কেউ তাদের এলাকায় ঢুকে পড়েছে। ঠিক সে কারণেই গাড়ির পিছনে ধাওয়া করে। তবে কুকুর যে বুদ্ধিমান প্রাণী তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই প্রশিক্ষকরা ঠিকঠাক বুঝিয়ে দিলে এ ভুল তারা আর দ্বিতীয়বার করে না। তবে রাস্তা বা পাড়ার কুকুরের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের বালাই নেই। তাই এই কাজটি করতে মূলত তাদেরই দেখা যায়। তবে এতে মানুষের উপকার বই অপকার নেই। কেননা এই কারণটি জেনে রাখলে, এলাকায় অচেনা কেউ যে ঢুকছে তা কুকুরের ধাওয়া করে দেখেই বুঝতে পারবে মানুষ। আর সতর্কবার্তা হিসেবে কুকুরের ডাক তো থাকলই। কুকুর সম্পর্কে আরও কিছু মজার তথ্য: ১। মানুষ প্রায় ৩০ হাজার বছর পূর্বে পোষাপ্রাণি হিসেবে কুকুরকে নিজেদের সাথে রাখতে শুরু করে। ২। ধারণা করা হয় কুকুর নেকড়ের পূর্বপুরুষ ছিল। এর কারণ আজ পর্যন্ত কুকুর ও নেকড়ে প্রজাতির ডিএনএ তে ৯৯.৯% মিল পাওয়া যায়। । বিশ্বের সবথেকে বয়স্ক কুকুরের নাম ছিল ম্যাগি, যা ৩০ বছর বয়সে মারা যায়। অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৮৬ সালে জন্ম নেয়া ম্যাগি ১৪ এপ্রিল, ২০১৬ সালে মারা যায়। ৪। কুকুরের রক্ত ১৩ প্রকার হয়ে থাকে যেখানে মানুষের রক্ত মাত্র চার প্রকার (O, A, B, AB) ।৫। গড়ে ২ বছর বয়সের একটি কুকুরের বাচ্চা যে পরিমাণ বুদ্ধিমান হয় তাতে তা মাত্র ১৫০ টি শব্দ বুঝতে পারে। ৬। মহাকাশে গমনকারী প্রথম জীব ছিল একটা কুকুর। লাইকা নামের একটি কুকুরকে ৩ নভেম্বর, ১৯৫৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে পাঠিয়ে দেয়। অত্যধিক চাপ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লাইকা মারা গিয়েছিল। ৭। কুকুরের শুধুমাত্র নাক ও থাবা দিয়ে ঘাম বের হয়। ৮। ১০ বছর অতিবাহিত হওয়া শতকরা ৫০ ভাগ কুকুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ৯। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি মানুষের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার গুণ বেশি। ১০। হিটলারের নাৎসী বাহিনী কুকুরকে কথা বলা এবং পড়াশোনার প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। ১১। চীনে প্রতিদিন ৩০ হাজার কুকুর মাংস ও চামড়ার জন্য হত্যা করা হয়! ১২। যদি কুকুর ডানদিকে হেলে যেতে থাকে তবে বুঝতে হবে সে খুশি আছে। আর যদি বামদিকে হেলে যেতে থাকে তবে বুঝতে হবে সে খুশি নয়। ১৩। কুকুর আপনার পাশে এসে লেজ নাড়ালে বুঝবেন সে কামড়াবে না। বুঝবেন খাবারের আশায় কাছে আসছে। ১৪। কুকুরও মানুষের মত স্বপ্ন দেখতে পারে! ১৫। যদি কুকুর চকলেট খায় তবে তার মৃত্যু হতে পারে! চকলেট ও কোকোতে থাকা থিওব্রোমিন নামক উপাদান মানুষ সহজেই হজম করতে পারে। কিন্তু কুকুর সহজে হজম করতে পারে না, যা পরবর্তীতে টক্সিন তৈরি করে। ১৬। কুকুর পোষায় আমেরিকার লোকেরা বেশি শখ প্রিয়। সেখানে প্রায় ৭ কোটি ঘরে পোষা কুকুর রয়েছে। ১৭। কুকুর পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্রের উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর হয়ে প্রস্রাব-পায়খানা করতে পছন্দ করে! সত্যিই বিস্ময়কর এই তথ্যটি। একটি কথা, কুকুর যে ঘরে থাকে সে ঘরে ফেরেশতা আসে না কথাটি ঠিক। কিন্তু এই কথা কোনোভাবেই কুকুর হত্যাকে সমর্থন করে না। তৃষ্ণার্থ এক কুকুরকে পানি পান করিয়ে বাঁচানোর কারণে জনৈক ব্যভিচারিনীর জান্নাত লাভের কথা আমরা সকলেই জানি। তাই কুকুর সম্পর্কে যাবতীয় ভ্রান্ত ধারণা দূর করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাদের বাঁচাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Wednesday, January 24, 2018
জানেন, কেন চলন্ত গাড়ির পিছনে ধাওয়া করে কুকুর ?
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.