ভারতের প্রখ্যাত নারী চলচ্চিত্রকার ও অভিনেত্রী অপর্ণা সেন বলেছেন, বাংলাদেশের সিনেমা খুব বেশি দেখার সুযোগ হয়নি। কয়েকটি দেখেছি। তার মধ্যে প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। মন ছুঁয়ে গেছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আশাবাদী এই নির্মাতা। ব্যাটে-বলে মিললে এ দেশে সিনেমাও নির্মাণ করতে চান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, লাল-সবুজের এই দেশে ছবি তৈরি করতে পারলে ভালো লাগবে। তবে আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো, আমি এই মুহূর্তে ঠিক কথা দিচ্ছি না। আমার গল্প যদি এখানে নিয়ে আসে, তবে আমি অবশ্যই সিনেমা নির্মাণ করবো। বাংলাদেশে ছবি বানাবো বলে গল্প ভাববো, তেমনটা নয়। দীর্ঘদিন কলকাতার বিখ্যাত নারী পত্রিকা ‘সানন্দা’য় লিখেছেন এই নারী নির্মাতা। পাশাপাশি করেছেন সম্পাদনাও। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, একটা কথা কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে। সময় পেরিয়ে যায়নি। একটা দেশে একটা গ্রোথ টাইম থাকে। সেভাবেই দেশ এবং দেশের সংস্কৃতি সামনের দিকে যায়। সেদিক দিয়ে বলতে গেলে ভারতবর্ষ থেকে প্রাচীন দেশ। তাই সেদেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে এদেশের চলচ্চিত্র গুলিয়ে ফেলবেন না। এমনকী বাংলাদেশকে এত তাড়াতাড়ি বিচার করবেন না, সময় দিন। বাংলাদেশে আসতে ভালো লাগে অপর্ণা সেনের। জানালেন সেই অনুভূতিও। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভক্তদের ভালবাসায় আমি মুগ্ধ, আপ্লুত। বারবার তাই ইচ্ছে করে সময় পেলে ছুটে আসি। অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করি, করার চেষ্টা করি। আপনারা সেগুলো দেখলে, মূল্যায়ন করলে ভালো লাগে। আশা রাখি ভবিষ্যতেও আপনারা এভাবে আমার পাশে থাকবেন, মায়ার অত্যাচারে আবদ্ধ রাখবেন। প্রায় ৫৭ বছর ধরে চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই অভিনেত্রী বলেন, আমি চাই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সিনেমা বিনিময় হোক। তাহলে দুই দেশের চলচ্চিত্রই সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে। ব্যবসায়িক দিকটাও ভালো যাবে। প্রযোজকরা উৎসাহিত হবেন বেশি টাকা লগ্নি করতে। সব মিলিয়ে মনে করি, বিনিময় হওয়াটা জরুরি। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ অপর্ণা সেনের আত্মীয় হলেও তিনি কখনোই নিজেকে সেই পরিচয়ে পরিচিত করেন না। জানালেন এর কারণও। তিনি বলেন, জীবনানন্দ দাশকে আমি কখনোই আত্মীয় হিসেবে দেখি না। তাকে আমি কবি হিসেবেই জানি। কারণ তিনি আত্মীয়েরও অনেক ঊর্ধ্বে। বেস্ট লাভ স্টোরি এগেইন্সট দ্য ওয়ার’ উল্লেখ করে এই প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমের গল্পের দিকে নজর দিলে দেখা যায় সেগুলো সব সংঘাতের প্রেক্ষাপটেই। আজকাল সেটা কোথায়? আগে তো ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রেম হলে পরিবার-বর্ণ-গোত্র দেখা হতো। এখন ব্যাপারটা আর নেই। মিস ক্যালক্যাটা খ্যাত অপর্ণা এই প্রতিবেদককে বলেন, কালো কিংবা দেখতে বেজায় ভালো যেমনই হোক, মেয়েদের শ্লীলতাহানি হচ্ছে। আগে যে হতো না, এমনটি নয়। মিডিয়ার কল্যাণে এখন মানুষ বেশি জানতে পারছে। বর্তমানে নারী নিপীড়নের হার বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে। আগে পাবলিক প্লেসে কোনো মেয়ে সাহায্য চাইলে পেতো, মানুষ এগিয়ে আসতো। অথচ মানুষ এখন ভয় পায়। সবাই নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আশেপাশে কী ঘটছে, তা দেখেও না-দেখার ভান করে। নারীদের উদ্দেশ্যে চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিনের পথচলায় এই ঋদ্ধজন বলেন, নারীরা এখন ঘর ছেড়ে বাইরে কাজ করছে। অর্থনৈতিকভাবে নিজে এবং পরিবারকে স্বাবলম্বী করে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে মজবুত করছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে সুখকর। কিন্তু কোথাও কোথাও নারীরা আজো অবহেলিত। আমি চাইব নারীরা এই শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ করুন। নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে চলচ্চিত্র জগতে আসেন অপর্ণা সেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘তিন কন্যা’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘জন অরণ্য’ এবং ‘পিকু’ সিনেমায় অভিনয় করে কুড়িয়েছেন প্রশংসা। তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘মেমসাহেব’, ‘আকাশকুসুম’, ‘একদিন আচানক’, ‘মহাপৃথিবী’, ‘বসন্ত বিলাপ’ ‘জীবন সৈকতে’, ‘সোনার খাঁচা’, ‘মোহনার দিকে’, ‘একান্ত আপন’, ‘পারমিতার একদিন’, ‘অন্তহীন’, ‘চতুষ্কোণ’ উল্লেখযোগ্য। এ পর্যন্ত নিজে ১৩টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত এই চলচ্চিত্রজন।
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Monday, January 29, 2018
বাংলাদেশকে তাড়াতাড়ি বিচার করবেন না, সময় দিন
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.